আমি আসলে ওভাবে ক্যাশ টাকা চাইনি-চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ(ভিডিও)

0
1043

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্যাশ টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, আমি আসলে ওভাবে ক্যাশ টাকা চাইনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই কাজ করেছে।’

তিনি টাকা চাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে আনা উচিত হয়নি মন্তব্য করে সাংবাদিকদের কড়া সমালোচনা করেন।রবিবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এসব কথা বলেন।এ সময় নিজেকে সৎ ও প্রবীন রাজনীতিক দাবি করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনই এভাবে গণমাধ্যমে রিপোর্ট করিয়েছে।

এদিকে, সরকারদলীয় চিফ হুইপের ক্যাশ টাকা চাওয়ার ওই ঘটনাটিকে গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য ‘অশনিসংকেত’ অভিহিত করে এই বিষয়ে স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

উল্লেখ্য, শুক্রবার নিজের নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালীর বাউফলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট গ্রহণের এক পর্যায়ে আ স ম ফিরোজ প্রকাশ্যে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) দলীয় কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বসব। যদি কারো উপঢৌকন দেয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে আর এই ক্রেস্ট না। ক্যাশ (নগদ টাকা) চাই, ক্যাশ চাই।’

এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বোঝেন নাই? নির্বাচন করতে গেলে অনেক লাগে। কাজেই ক্যাশ দিয়েন, খুব ভালো হবে। কাল (শনিবার) দেখা হবে সবার সঙ্গে। আজ আর কোনো ক্রেস্ট নেব না, সমস্ত ক্রেস্ট আমি পরে নেব।’

অবশ্য পরে ওই বক্তব্যের বিষয়ে চিফ হুইপ গণমাধ্যমে বলেন, ‘নিজের জন্য নয়, দলের জন্য টাকা চেয়েছেন তিনি। যাতে দলীয় ফান্ড আরো শক্তিশালী হয়।’

আজ নিজের অবস্থান আরো স্পষ্ট করার জন্য সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে হাজির হন দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্টেজ, ফুল, ক্রেস্ট ইত্যাদি খাতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তখন আমি শুধু বলতে চেয়েছি, এসব বন্ধ কর। ক্যাশ দাও, দলের ফান্ড শক্তিশালী কর।’

ওই বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশকে ‘ষড়যন্ত্র’ দাবি করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সমালোচনা করেন ছয়বারের এই সংসদ সদস্য।

আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘পত্রিকায় যেভাবে খবরটি এসেছে, আমি আসলে সেভাবে বলিনি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘এর আগেও প্রথম আলো পত্রিকায় আমাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে নিউজ করা হয়েছে। ডেইলি স্টার পত্রিকায় আমাকে ডিফল্টার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।’

চিফ হুইপ আরো বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যারা আমাকে ছোট করতে চেয়েছে, তারাই এ রকম খবর প্রকাশ করেছে। আমি ১৯৭৯ সাল থেকে বাউফল এলাকার ছয়বারের সংসদ সদস্য। এত বছরেও কেউ আমার বিরুদ্ধে অনৈতিক কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার আমি নিজ এলাকা বাউফলে যায়। সেখানে নির্বাচনী এলাকার লোকজন আমাকে ভালবেসে সংবর্ধনার আয়োজন করে। ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক জমায়েত হয়েছিল। সেখানে এমন উপহার সামগ্রী এসেছিল যা নিতে গেলে আমাকে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যেটা সম্ভব না। তখন আমি হাসোচ্ছ্বলে নেতাকর্মীদের বলেছি তোমরা উপহার না দিয়ে দলের জন্য ক্যাশ গঠন কর। কারণ দল চালাতে অনেক টাকা লাগে।’

চিফ হুইপ বলেন, ‘আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাতে মনে হবে এটা চাঁদাবাজির বক্তব্য। কিন্তু আমি ওই বক্তব্য ওভাবে বলিনি। বরং এমন হাস্যরসের একটি বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে আমাকে ছোট করা হয়েছে। এ বিষয়টি পত্রিকায় না আসলেও পারতো।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার এ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। তবে যারা আমার চরিত্র হননের জন্য এটিকে মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে তাদেরও ক্ষমা চাইতে হবে।’

আ স ম ফিরোজ দাবি করেন, ‘আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করি। গত নির্বাচনের হলফ নামায়ও আমার সম্পদ অনেক কম দেখিয়েছি। তার মানে আমি খুবই স্বচ্ছ ও স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করি।’