সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ : যা কিছু করণীয়, মিহরাজ রায়হান

0
1181

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম। মহামারির মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এটি। ব্যক্তি, সমাজ, সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এটি ব্যাপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রজুড়ে। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নের গতিশীলতা। সন্ত্রাসী আর জঙ্গিবাদীরা কখনো প্রকাশ্যে কখনো আড়ালে থেকে এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে যে এখন বিশ্বের কোনো মানুষ নিজেকে নিরাপদ বলে ভাবতে পারছে না। বিশ্বের নানা দেশ ঘুরে এর ব্যাপ্তি ঘটেছে আমাদের এ শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বাংলাদেশেও।
সন্ত্রাস কী? কেনই বা জঙ্গিবাদ? সন্ত্রাস এর অর্থ ভয় ও ভীতিকর অবস্থা। কোনো নীতি বহির্ভূত কর্মকা-ের মাধ্যমে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন, নিরাপত্তা হরণ, পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো, ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা সন্ত্রাসের অন্তর্ভুক্ত। সংঘবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষকে বশীভূত করার পদ্ধতিই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। এই বেআইনি তৎপরতা যারা পরিচালনা করে তারাই সন্ত্রাসী। অন্যদিকে জঙ্গি হচ্ছে তারা যারা জঙ্গে লিপ্ত হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ। অতএব যোদ্ধারাই জঙ্গি। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গি নামে আমরা তাদেরই চিনি যারা প্রচলিত রীতি-নীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তথাকথিত মহান লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে। তাদের দর্শন হচ্ছে সন্ত্রাস ও হত্যাকা-ের মাধ্যমে সমাজকে বদলে দেয়া; আদর্শ ও চরিত্র দিয়ে নয়। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে নীতিভ্রষ্ট ও আদর্শহীন অভিহিত করে প্রকারান্তরে তারাই ন্যায়নীতির তোয়াক্কা না করে হত্যাযজ্ঞে নেমে পড়ে।
জঙ্গিদের কোনো দল নেই। এদের কোনো ধর্ম নেই। আর তারা নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে সীমাবদ্ধও নয়। কোনো কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন প্রলোভনে তাদেরকে এ জঘন্য তৎপরতায় নামিয়ে দেয়। ঐ গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে পার্থিব সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা দখল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। এটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এরা দেশের উদীয়মান তরুণ সমাজের মগজধোলাই করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুন, বোমাবাজির মতো হীন তৎপরতায় জড়িত করছে। বিপথগামী এসব তারুণরা জানেও না যে কেন তারা এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক স্রোতধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে এরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে মগ্ন হচ্ছে। এ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্রীড়ানকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধরা থেকে যায়। তবে সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটার পর গুপ্তস্থান থেকে বিরতি দিয়ে এ ঘটনার দায় স্বীকার করে তারা।
হালে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা এনে সে ধর্মের সার্বজনীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে তারা। কখনো ইসলাম কখনো বা অন্য কোনো ধর্মের দোহাই দিয়ে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে এ জঙ্গিগোষ্ঠী। বাংলাদেশে এ কর্মকা- চলছে ইসলামের দোহাই দিয়ে। নিজেদের সাচ্চা মুমিন আখ্যা দিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বী এমনকি মুসলিমদেরও এরা কাফির বলতে কুণ্ঠিত হয় না। কখনো ব্লগার, কখনো নাস্তিক্যবাদী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বী নিরীহ ব্যক্তি, ধর্মগুরু বা পুরোহিত কেউই এদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গত দুই বছরে ইসলামের দোহাই দিয়ে এ জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে যা করেছে তা দেখে পুরো বিশ্ব হতবাক হয়েছে। মডারেট ইসলামের অনুসারী বাংলাদেশে একুশ শতকের মানুষ দেখলো মধ্যযুগীয় বর্বরতার উল্লম্ফন। জবাই করে, কুপিয়ে মানুষ হত্যা চলেছে এখানে এবং এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে স্থানে স্থানে।
আগেই বলেছি- সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের কোনো জাত-কূল নেই। ওদের কোনো ধর্ম নেই। ধর্মে সহিংসতার স্থান নেই। ধর্ম মানবিকতার, পাশবিকতার বিরুদ্ধে ধর্মের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামের অবতার মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ ও কার্যকলাপই এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। তাই ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ যারা চালায় তারা ইসলামের ঘোর শত্রু বটে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মান কাতালা নাফসান বিগাইরি নাফসিন আও ফাসাদিন ফিল আরদি ফাকাআন্নামা কাতালান্নাসা জামিয়া। ওয়ামান আহইয়াহা ফাকাআন্নামা আহইয়ান্নাহা জামিয়া’- (If anyone killed a person not in relation of murdes or to spread mischief en the land. it should be as if he killed all mankind and if anyone saved a life; it would be as if he saved the life all mankind.)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল মুমিনু মান আমিনাহুন্নাসু আলা দিমায়িহিম ওয়া আমওয়ালিহিম’- (He is the true mumin whom the mankind think safe from their lives and properties.)
পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াত ও মহানবীর বাণীটি দ্বারা একথা অনুধাবন করা যথেষ্ট যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অবস্থান ইসলামের ঠিক বিপরীত দিকেই। অতএব ইসলামের দোহাই দিয়ে যারা হামলা, ভাংচুর, হত্যাযজ্ঞে মত্ত তারা কোনোভাবেই মুসলমান হতে পারে না। কোরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, এর অর্থ বিকৃত করে এদেশের ধর্মভীরু কিছু মেধাবী তরুণকে কুশিক্ষা দিয়ে তারা বিপথগামী করছে। দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে, সরল সুবোধ তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বানাচ্ছে এরা। ভিন্ন মতাবলম্বীদের কাফির ও নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদেরকে হত্যা করে বেহেশত পাবার প্রলোভন দিচ্ছে এরা। সে প্রলোভনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে দেশের ভবিষ্যত চালিকাশক্তি, দেশ ও জাতির আশার আলো এ তরুণরা পরিবারের শান্তি ও সুখের নিবিড় নিলয় ছেড়ে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের সেরা বিদ্যাপিঠগুলোয় অধ্যয়নরত এ তরুণরা আজ ভিড়েছে দেশ ও সমাজের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের দলে। শায়খ আবদুর রহমান বা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের মতো শিক্ষিত (!) ব্যক্তিদের ডাকে জামাতুল মুজাহেদিন গত দশকে সারাদেশে যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ঠিক সে পথ ধরে আবারও শুরু হয়েছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। তখন এদের উৎপত্তি হয় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। আর এখন জঙ্গিবাদের সূতিকাগার হিসেবে আধুনিক শিক্ষার উচ্চতম স্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গুলশানের বিদেশি রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, দুই পুলিশ অফিসারকে যারা খুন করেছে তাদের অধিকাংশই এদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর তাদের মন্ত্রণাদাতাদের একজন সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক।
একসময় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও রাহাজানির জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দুর্নাম ছিল। ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনও করতে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের নেতাকে। শিক্ষকের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নারীলোলুপতাও নতুন কোনো ঘটনা নয়। পিতৃতুল্য কোনো শিক্ষক তার ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন এমন জঘন্য সংবাদ ছাড়া দৈনিক পত্রিকা এখন পাওয়া যাবে না। কিন্তু কোনো শিক্ষক জঙ্গিবাদে উস্কানি দেন বা এ তৎপরতায় নেতৃত্ব দেবেন এটা এসময়ের জন্য সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা ব্যথিত হই, লজ্জিত হই আর হতাশ হই যখন দেখি মানুষ গড়ার কোনো কারিগর তার ছাত্রদেরকে মানুষ মারতে উদ্বুদ্ধ করেন। সময় এসেছে এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবার। এমন শিক্ষক-শিক্ষার্থী যেন আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না থাকেন। আর তাদেরকে যারা লালন-পালন করে তারা যেনো সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নির্মূল হয় সে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হয়ে সচেতনতার সাথে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমকে গুরুত্ব দিয়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে হতে হবে সক্রিয়। সন্তানদের গতিবিধির উপর পূর্ণ নজরদারি রাখতে হবে অভিভাবকদের। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা প্রচার করতে হবে সব ধর্মের নেতাদের।
অন্যদিকে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব, চাওয়ার আগেই পেয়ে যাওয়ার কারণে ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি, পরিবার ও সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে অতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়া, মাদকাসক্ত হওয়া এবং প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবেই সন্ত্রাসী হওয়ার প্রেরণা পায় তরুণরা। সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তরুণদের সঠিক ও স্বাভাবিক পথে পরিচালিত করতে হলে তাদেরকে পরিবার ও সমাজঘনিষ্ঠ করতে হবে। বাড়াবাড়ি রকমের ¯েœহ ও লাগামহীন চাওয়া-পাওয়ায় প্রশ্রয় না দিয়ে অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তানদের সার্বক্ষণিক খবরাখবর রাখা। আরেক মায়ের বুক খালি করার দায়ে যখন নিজের বুক খালির উপক্রম হয় সেই শোকে কাতর হওয়ার আগেভাগেই বাবা-মা’কে সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার।
পরিবার একজন মানুষের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ স্কুল। এখান থেকেই মানুষ প্রথম শিক্ষা পায়। পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতা থাকলেও যৌথ পরিবার থেকে একজন মানুষ সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে পারে। কিন্তু আজ নানা কারণে ভেঙে যাচ্ছে সেই প্রথম বিদ্যাপিঠ তথা যৌথ পরিবার। পরিবার ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা এবং আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ।
বর্তমানে দেশের তরুণ প্রজন্ম হতাশাগ্রস্ত। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় তরুণদের জড়িত থাকায় বিষয়টি সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে হতাশার এ চিত্র একদিনে গড়ে ওঠেনি। এটি তরুণ প্রজন্মের প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল। এ প্রজন্মকে আমরা সুশিক্ষা দিতে পারছি না। ব্যস্ততার কারণে পরিবারের সদস্যরাও এদের ঠিকমতো সময় দিচ্ছে না। ফলে এরা নিঃসঙ্গতায় দিন কাটায়। এমন অবস্থায় সঠিক নির্দেশনার অভাবে তরুণ প্রজন্ম বিপথে পা বাড়ায়। পরিবারের গ-িতে বাঁধা পড়তে মানুষ এখন আর অতটা স্বাচ্ছন্দ নয়। মানুষের উচ্চাশা বাড়ছে, জীবন যাপনে ঔজ্জ্বল্য চায়, কেনাকাটায় ব্র্যান্ড চায়, আয় ইনকাম যাই হোক ফ্ল্যাট আর গাড়ি চায়। আর এই লাগামহীন চাওয়ায় সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে- কোনো খবর নেই পরিবারের কর্তাদের। আবার এমনও দেখা যায়, সন্তানকে ইংরেজি স্কুলে পড়িয়ে অনেক পিতামাতা এমন আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, সন্তান যা-ই বলে-করে সেটিই ঠিক বলে মনে করেন। কেউ কেউতো সন্তানের কর্তৃত্বে নিজেদের সঁপে দেন। সন্তান স্কুলের ক্যান্টিনে বসে যথেচ্ছ খরচ করে আর অভিভাবক এসে সেই বিল পরিশোধ করেন। ঠিক-বেঠিক কিংবা পরিমিতিবোধের প্রশ্নটি পর্যন্ত তোলেন না, পাছে সন্তান মনক্ষুণ হয়।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর একের পর এক অভিযানে এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এ পর্যন্ত ৪৫ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এসব সন্তান বাবার বুকের আর মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবতায় আমরা দেখছি, অভিযানে মারা যাওয়ার পর লাশ নিতে পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেন নি। সমাজের ভয়ে সন্তানকে দৃশ্যত অস্বীকার করলেও বাবা মায়ের বুকের রক্তক্ষরণ কি বন্ধ আছে?
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, এক/দুই যুগ আগেও মানুষের আশা-আনন্দ-বিনোদনের কেন্দ্র জুড়ে ছিল পরিবার। এখন পারিবারিক সম্পর্কগুলো হয়ে গেছে খুব ঠুনকো, অনাত্মীয়ধর্মী। সবকিছুর পরও টিনএজ ছেলেমেয়েদের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের মূল স্থানটি হচ্ছে তার পরিবার। অনেক অভিভাবক রয়েছেন যারা সন্তানকে তাঁদের আদর্শে অনুপ্রাণিত না করে বহমান সমাজের আদর্শে বড় হওয়াকে সঠিক বলে মনে করেন। কিন্তু এই ভাবনা মানেই হলো অগোচরে সন্তানের ক্ষতি কামনা করা। সন্তানের প্রতি আদরের বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তার যেটুকু দরকার, সেটুকু দিতে হবে। বিলাসিতার পথে সন্তানকে ঠেলে দেওয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে তাকে কর্মের মাধ্যমে অর্জনে সহায়তা করতে হবে। উগ্র কোনো মতবাদ, বদ্ধ ও অনগ্রসর চিন্তা থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে হবে। বেড়ে ওঠার দিনগুলোয় একটি শিশু তার চারপাশে আদর্শ বা আইডল খোঁজে। মা-বাবা, নিকটাত্মীয়দের মাঝেই সেই আদর্শ সন্ধান করে। অভিভাবকদের উচিত হবে, সন্তানকে সঠিক আদর্শ খোঁজায় সহায়তা করা। জগতের মহৎ মানুষদের জীবনীপাঠে উৎসাহিত করতে হবে যাতে সন্তানের চোখের সামনে কল্যাণী মানুষের ছবি তৈরি হয়। এই ছবিই তাকে বড় হওয়ার দিশা দেবে। সেদিন সুদূর নয়- আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগে যেদিন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চিরতরে নির্মূল হবে।
মিহ্রাজ রায়হান: সহ-সম্পাদক, দৈনিক পূর্বকোণ।