অবশেষে চালু হচ্ছে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক

0
923

অবশেষে চালু হচ্ছে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সড়ক। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামী মার্চে। রাস্তাটি চালুর মাধ্যমে নগরীর স্থবির হয়ে যাওয়া বিস্তৃত এলাকার যান চলাচলে গতিশীলতা আসবে। চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়কটি শুধু নগরীর যান চলাচলই নয়, আবাসন শিল্পায়ন এবং পর্যটনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সময় গৃহীত প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালে একনেকে পাস হলেও তা হিমাগারে আটকা পড়ে। পরে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চার লেনের রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে শুরু হয় কাজ। নির্মিত হয় ব্রিজসহ নানা স্থাপনা। পরবর্তীতে রাস্তাটির কাজ নিয়ে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই রাস্তার জন্য যখন ভূমি হুকুম দখল করা হয় তখন এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটিকেও ১০৪ একর ভূমি প্রদান করা হয়েছিল। রাস্তা নির্মাণের সময় দেখা যায় যে প্রায় ৪ হাজার ফুট বা ১.২২ কিলোমিটার রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ একর এলাকার মধ্যে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের ভিতর দিয়ে রাস্তা যাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি তোলে। এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটি রাস্তার ওই অংশটি তাদের নিকট হস্তান্তর করে ক্যাম্পাসের বাইরের অংশ দিয়ে নতুন করে রাস্তা তৈরির দাবি জানায়। ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা তারা অভ্যন্তরীণ রোড হিসেবে ব্যবহার করবে এমন শর্তও জুড়ে দেয়। সিডিএ তীব্র আপত্তি করলে বেঁকে বসে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটি। পরে দফায় দফায় বৈঠক এবং নানা দেনদরবারের পর এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি তাদের ছেড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশ ঘেঁষে নতুন করে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। নতুন করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২১০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরো কিছু খরচ কাটছাঁট করে প্রকল্প ব্যয় ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে। আগে করা কাজগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। প্রকল্প ব্যয় উন্নীত হয় ৩২০ কোটি টাকায়।
ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটির জন্য সর্বমোট ৯১৯.৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। একটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ নির্মাণসহ ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কয়েকটি কালভার্টও রয়েছে। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ে যাতে পানি জমে সড়কের ক্ষতি কিংবা পাহাড় ধসের মতো অঘটন না ঘটে সেজন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে যে, ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তার প্রায় কাজই শেষ হয়েছে। তবে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির পাশে পাঁচশ’ মিটারের মতো রাস্তার কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে এই কাজটুকু শেষ হলে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব দাশ দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রকল্পের সাথে জড়িত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেলওয়ে ওভারপাস এবং রাস্তার সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে এসব কাজ করে ফেলবো। ওভারপাস না হলেও আমরা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করতে পারবো। চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ফৌজদারহাট-বায়েজিদ রোডে গাড়ি চলবে বলেও দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিস্তৃত এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এই রাস্তাটি দ্রুত চালু করা জরুরী বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবেশ মুখ স্থবির হয়ে গেছে। কর্ণেল হাট থেকে একে খান মোড়, জাকির হোসেন রোড থেকে জিইসি এবং সন্নিহিত এলাকায় রাতে দিনে যানজট লেগে থাকে। সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট থেকে মুক্তি মিলেনা গভীর রাতেও। বড় বড় প্রাইম মুভার, রডের গাড়ি, সিমেন্টের গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মিলে বেহাল অবস্থা শুরু হয় সকাল থেকে। বাইপাস সড়কটি ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ রোডের সাথে যুক্ত হবে। বায়েজিদ রোড অঙিজেন মোড়ে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে অঙিজেন-কুয়াইশ সড়কের সাথে। এতে করে ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত বিসতৃত এলাকা থেকে আসা যেসব গাড়ি উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙুনিয়া, কাপ্তাইসহ সন্নিহিত অঞ্চলে কিংবা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কঙবাজারসহ দক্ষিন চট্টগ্রামে যাবে সেই সব গাড়ি শহরে প্রবেশ না করে এই রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। আবার শহর বা উপরোক্ত অঞ্চলগুলো থেকে যেসব গাড়ি ঢাকা কিংবা দেশের অপরাপর অংশে যাবে সেগুলো শহরের জিইসি মোড বা জাকির হোসেন রোড স্পর্শ না করেই বাইপাস রোড ধরে বেরিয়ে যেতে পারবে। অপরদিকে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং ফৌজদারহাট থেকে রড এবং স্টিল আনা নেয়ার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য প্রাইমমুভার শহরের ভিতর দিয়ে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় যাতায়াত করে। রডবাহী বিশাল বিশাল গাড়িগুলো জাকির হোসেন রোডে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে তার ধকল পুরো এলাকার যান চলাচলের ক্ষেত্রে পড়ে। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি বড় বড় প্রাইমমুভারের দখলে থাকে পুরো জাকির হোসেন রোড। রাস্তাটি চালু হলে এই ধরনের বিপুল সংখ্যক গাড়ি শহরের যান চলাচলের উপর যেই চাপ সৃষ্টি করছে তা থেকে নগরী রক্ষা পাবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে। যান চলাচলের পাশাপাশি সড়কটি সন্নিহিত এলাকায় আবাসন এবং শিল্পায়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।