নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনে যা বললেন চার মেয়র প্রার্থী

0
393

সরস্বতী পূজার কথা বিবেচনা করে আন্দোলনের মুখে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ দুই দিন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা দুই দিন পেছানো হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা বৈঠকে বসেন সিইসির নেতৃত্বে অন্য কমিশনাররা। পরে রাত সাড়ে ৮টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান।

নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। তবে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস পরীক্ষা না পিছিয়ে নির্বাচন এগিয়ে আনার পক্ষে মত দেন।

ইসির এমন সিদ্ধান্তে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ তা আবারও প্রমাণ হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বন্ধুর উৎসবে আমি যেতে পারবো না বা সে সুন্দরভাবে সবাইকে নিয়ে তার ধর্মীয় উৎসবটি পালন করতে পারবে না, এটা আসলে হয় না। আমরা সবাই মিলে সবার ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবো। আমি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।’

অপরদিকে রাজধানীর গোপীবাগে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক বলেন, ‌‘আমি খুশি যে নির্বাচন কমিশন একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি, যখন তফসিল ঘোষণা করা হয় তখনই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল। তবে যেহেতু এখন সবার দাবির মুখে উনারা সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, তো এটি একটা ভালো পদক্ষেপ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, আমাদের হিন্দু ধর্মালম্বী যারা আছেন, তারা হয়তো আরেও আনন্দিত হবেন। ভবিষ্যতে যাতে তাদের এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় সেটাতে আমি জোর দেব।’

আপনি এই তারিখ মেনে নিয়েছেন, প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, ‘অবশ্যই মেনে নিয়েছি। এটা তো আমার দাবিই ছিল। আমি তো দাবি করেছি যে, এটা একদিন হলে আগানো হোক বা পেছানো হোক। যাই করা হোক পূজার দিনটা কেন? এটা তো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের জন্য। আপনারা জানেন, একটা বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে, আমাদের পুরান ঢাকায় বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাদের দাবি ছিল, তারাও আমার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন, আমাকে বলছে যে, মিডিয়ার সামনে কথা বলার জন্য। আমি সেটা করেছি।’

বিএনপির অপর প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‌‘আমি খুশি। আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি, জনগণের পক্ষে বা জনগণের দাবিতে নির্বাচন কমিশন একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা উচিত ছিল আরও আগে নেয়া। আগে না নেয়া বলেই কিন্তু আবারও নির্বাচন কমিশন তার ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন, তাদের অযোগ্যতার প্রমাণও আবার দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘‌বিগত ২২ ডিসেম্বর যখন তফসিল ঘোষণা হয়েছিল তখনই কিন্তু আমরা নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। উনার একটা তারিখ নির্ধারণ করেছেন, যেটা অবশ্যই বির্তক সৃষ্টি করবে। কারণ এই তারিখটা (৩০ জানুয়ারি) আমাদের হিন্দু ধর্মের পূজার সঙ্গে ক্ল্যাশ করে। বিশেষ করে সরস্বতী পূজাটা বিভিন্ন স্কুল সেন্টারে ব্যবহার করে উদযাপনের জন্য।’

তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘ওই তারিখ ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন বলতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক প্রতিক্রিয়া এসেছিল। উনার কিন্তু কোনো কিছুই আমলে নেনি। এখন যখন উনারা বাধ্য হয়েছেন বিভিন্ন প্রেসারে, দেশে তো এই ব্যাপারে ঐক্য আছে। এখন নির্বাচনটা উনার পিছিয়েছেন।’

তাবিথ বলেন, ‘ঢাকার উত্তরের বাসীকে বলছি, ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য আমি প্রস্তুত। উনারা যেন প্রস্তুত থাকেন। অবশ্যই নিজের ভোট নিজেরা দেবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে। সবাই প্রস্তুতি নিন।’

তবে কিছুটা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরস্বতী পূজা ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। একইদিনে ভোটের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা মনক্ষুণ্ন ছিলেন। তাদের অসুবিধা ও আবেগের জায়গা বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এটি শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রস্তুতির একটা বিষয় থাকে। তাই নির্বাচন না পিছিয়ে এগিয়ে আনা হলে আরও ভালো হতো। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কারণ, এখানে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাদের প্রস্তুতির যে ব্যাপার আছে, সেখানে ব্যাঘাত ঘটবে। এমনিতেই নির্বাচনি কার্যক্রমের কারণে তাদের পড়াশোনায় কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, আগামি ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণ করার কথা থাকলেও পূজার কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এমনকি গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা।

ভোট পেছানোর ক্ষেত্রে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও। এমনকি ভোট পেছানোর দাবির বিষ